স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে টানা কয়েকবছর ধরে দেশসেরা হওয়া কলেজটির এই সংগঠনটি আশঙ্কা করেছিল, দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। প্রয়োজন হতে পারে অক্সিজেনের। তাই রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনে সংগ্রহ করে রেখেছিল অক্সিজেনের সিলিন্ডার। এখন সেগুলো কাজে লাগছে।
রাজশাহী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এর সামাজিক সংক্রমণে এখন ঘরে ঘরে কোভিড-১৯ রোগী। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ফুরিয়েছে করোনা রোগী রাখার জায়গা। রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ না হলে হাসপাতালে রোগী ভর্তিও নেয়া হচ্ছে না। চিকিৎসা করতে বলা হচ্ছে বাসায়। কিন্তু বাসায় প্রায় ২০ হাজার টাকায় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা অনেকের জন্যই কঠিন।
এমন ক্রান্তিকালে সদস্যদের জন্য প্রস্তুত আছে রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির রয়েছে ৩৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। সদস্যদের কারও প্রয়োজন হলে এই সিলিন্ডারগুলোই ব্যবহার করতে পারছেন। তাছাড়া কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও পাশে থাকছে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। কারও একাধিক সিলিন্ডারের প্রয়োজন হলে তাঁরা মাত্র ১৮০ টাকাতেই সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করে নিতে পারছেন। এতে বাড়িতেই সম্ভব হচ্ছে চিকিৎসা।
রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজল জানালেন, প্রায় পাঁচ মাস আগেই তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন যে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই তখনই তাঁরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে রাখার পরিকল্পনা করেন। তখন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রাক্তন ব্যাচের কাছ থেকে সিলিন্ডার আহ্বান করা হয়। এরপর বিভিন্ন ব্যাচ থেকে ২৯টি সিলিন্ডার জমা পড়ে।
অধ্যাপক চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজল জানান, রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে যাঁরা শহরে বসবাস করেন তাঁরা চাইলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারছেন। তাঁদের আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাসায় অক্সিমিটার রাখছেন। শরীরে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন দেখছেন। অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলেই তাঁরা অ্যাসোসিয়েশনের সিলিন্ডার চাচ্ছেন।
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রেজা জানান, শুধু সিলিন্ডারের ব্যবস্থায় নয়, সংগঠনের সদস্য থাকা চিকিৎসকদের সমন্বয়ে তাঁরা একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমও গঠন করেছেন। টিমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খলিলুর রহমান, ডা. মাহবুবুর রহমান খান বাদশার মত নামকরা চিকিৎসকরা আছেন। করোনায় সংগঠনের কেউ অসুস্থ হলে তাঁরা টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। এভাবে অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠনগুলোও যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অনেকটা সহজ হবে। চাপ কমবে হাসপাতালেও। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই উদ্যোগের বিষয়টি জেনেছেন। এ ধরনের উদ্যোগ কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তিনি সে বিষয়েও ভাবছেন।
রাজশাহীতে এখন প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যার সংখ্যা ১৮টি। হাসপাতালে সোমবার সকালে ভর্তি ছিলেন ৩০৭ জন রোগী। আইসিইউতে শয্যা পেতে সিরিয়ালে থাকছেন অন্তত ৪০ জন রোগী। আর সাধারণ শয্যা ছাড়া মেঝেতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই বলে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ না হলে বাসাতেই থাকতে বলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের জন্য দৃষ্টান্ত রাজশাহী কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.